বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩০ অপরাহ্ন
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে নদী ভাঙে কখনো দেখি নাই। এই বার সমেত ৬ বার ভাঙছে মোর বসতভিটা। এখন মানুষের জমিত ঘর তুলি আছম। আজ ১৫দিন থাকি রাইতোত ঘুমবার পাম না। কখন বা মোর ঘর নদীত চলি যায়। সরকার তো নদীর চরত মেলা ঘর তুলি দিছে। যদি ৬ মাসত ২ বার ঘর ভাঙা নাগে, তাইলে ঘর দিয়ে লাভ কি! হ্যামার দরকার যাতে নদী না ভাঙে। বালুর বস্তা ফেলে দিয়ে কি বসতবাড়ি রক্ষা হবে বাহে। উপরোক্ত কথাগুলো বলেন উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের মোঃ আনছার আলী। তার ভাষ্য নদীর ভাঙন এলাকা আর তার ঘরের দুরত্ব প্রায় ৫০ হাত। এই অবস্থায় কমপক্ষে ১০০ পরিবারের বসতভিটা। পানির কল কল শব্দে আনছার আলীর মত অনেকের ঘুম নেই বললে চলে।
তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার ইউনিয়নের উজানে অসময়ে গত ১০ দিন ধরে ব্যাপক হারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী পারের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কখন তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হবে তা নিয়ে দিশেহারা চরবাসি বলেন কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নেম্বর মোঃ রফিকুল ইসলাম। তার ভাষ্য গোটা বছর নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাবে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ সম্ভব হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করার দাবি তার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে প্রতিবছর গড় ৫০০ বসতভিটা, ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠান তিস্তায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখানে জানা গেছে গত ৫ বছরে আড়াই হাজার বসতভিটা, এক হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি, ৫০ কিলোমিটার রাস্তাঘাট, ৩০টি র্মীয় ও ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ভাঙন কবলিত পরিবারের জন্য ত্রান বিতরণ করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
হরিপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর গ্রামের মোঃ সোলেমান মিয়া বলেন চরের প্রতিটি মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে ৫ হতে ৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে সারা বছর নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপজেলার, শ্রীপুর ইউনিয়নের ফুল ময়িার বাজাররে র্পূব পাশ্বে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নওেয়ায় ঐ এলাকায় দনিরে পর দনি নদী ভাঙ্গতছে।ে
উজানের পলি জমে নদী ভরে গিয়ে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারনে তিস্তা অসংখ্য শাখা নদীতে রুপ দিয়েছে বলেন হরিপুরের কাশিম বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ.ব.ম. আব্দুল ওয়াহেদ সরকার। তার ভাষ্য, যার জন্য সময় এবং অসময়ে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে না পারলে চরের মানুষের কষ্ট কোন দিন দুর হবে না।
পানি কমলে উজানে আর পানি বাড়লে ভাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে উজানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘদিন হতে বিভিন্ন সংগ্রাম পরিষদ, এনজিও সংস্থা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি কাজ করলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকার বলেন কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জু মিয়া। তার ভাষ্য নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর কষ্টের সীমা নেই। তার ইউনিয়নের সবগুলো ওয়ার্ড নদীর চরে। চরের একটি পরিবার বছরে ৪ হতে ৫ বার নদী ভাঙনের কবলে পরে থাকেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরী হয়ে পরেছে।